এমবেডেড জার্নালিজম বা হোয়াইট প্রোপাগান্ডা সাংবাদিকতা

Posted by

এমবেডেড জার্নালিজম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয় ২০০৩ সালে। বিভিন্ন পন্ডিত ও সমালোচক এই এমবেডেড সাংবাদিকতাকে সাদা প্রোপাগান্ডা বা হোয়াইট প্রোপাগান্ডা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এমবেডেড জার্নালিজমযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য যে সকল সাংবাদিক কে সৈনিকদের সাথে যুদ্ধের ময়দানে পাঠানো হয় তাদের এমবেডেড সাংবাদিক বলে। আর যুদ্ধের ময়দানে তাদের এরূপ সাংবাদিকতার ধরণকে এমবেডেড জার্নালিজম বা প্রোথিত সাংবাদিকতা বলে।

এমবেডেডড জার্নালিজম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয় ২০০৩ সালে।

১৯৯১ সালে গালফ ওয়ার এবং ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান দখলের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও এর সেনাবাহিনী ওই দেশটির জনগণের চাপের মুখে পড়েছিল।

এ কারণে ২০০৩ সালে ইরাক দখলের সময় নতুন এক অপ-সাংবাদিকতার সূচনা হয়, যার নাম এমবেডেড জার্নালিজম।

বিভিন্ন পন্ডিত ও সমালোচক এই এমবেডেড সাংবাদিকতাকে সাদা প্রোপাগান্ডা বা হোয়াইট প্রোপাগান্ডা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এমবেডেড জার্নালিজম বা সাংবাদিকতা শুরু

ইরাক যুদ্ধের (২০০৩) যে খবর টেলিভিশনে ও সংবাদপত্রে মানুষ দেখেছে, শুনেছে ও পড়েছে, সেই খবর সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে বলা হয়েছে এমবেডেড সাংবাদিকতা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের সময় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মার্কিন ও ব্রিটিশ মিডিয়ার পাঠানো সংবাদচিত্র এবং খবর বিশ্বব্যাপী সরাসরি দেখতে পারে টিভি দর্শকরা।

এই এমবেডেড সাংবাদিকতা ‘গেঁথে যাওয়া সাংবাদিকতা’ বলে চিহ্নিত হতে পারে।

ইরাক আক্রমণের সময় মিডিয়া গেঁথে গিয়েছিল মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে। তারা যেসব রিপোর্ট পাঠিয়েছে তা সামরিক বাহিনীর ছাড় করার পর।

সামরিক বাহিনীর সঙ্গে পূর্বাহ্নে এ ধরনের চুক্তি বা সমঝোতা করেই মিডিয়া রণক্ষেত্রে রিপোর্টার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

এ ধরনের সাংবাদিকতা খোদ যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাজ্যে সর্বসম্মত সমর্থন পায়নি।

তবে মিডিয়া বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া শিক্ষকদের কেউ কেউ বলেছেন, যুদ্ধের বাস্তবতায় এটা মন্দের ভালো।

মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন- 

অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে কী হচ্ছে সেটা একেবারে না দেখা বা না জানার চেয়ে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করা দৃশ্যতই না হয় দেখা গেল!

আর এ জন্যই টিভি দর্শকরা মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর সাফল্যই কেবল দেখেছে। যৌথ বাহিনীকে যেখানে প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছে সেটা টিভির পর্দায় আসেনি।

সেখানকার সাধারণ নিরপরাধ মানুষের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের কোনো সংবাদচিত্র কোনো চ্যানেলই প্রচার করেনি।

এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করেছে সিএনএন, বিবিসি ও অন্যান্য মিডিয়া প্রতিষ্ঠান। অবশ্য কৌশলে নিজের বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে কেউ কেউ সংবাদপত্রে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।

বাংলাদেশে অদৃশ্য ‘এমবেডেড সাংবাদিকতা’

বাংলাদেশে অদৃশ্য ‘এমবেডেড সাংবাদিকতা’ রয়েছে বলা যায়। এর ধরনটা একটু ভিন্ন।  এখানে ‘স্পন্সরড’ সাংবাদিকতা অনেকটা এমবেডেড সাংবাদিকতার মতোই।

স্পন্সর ঠিক সেন্সর না করলেও তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে এসব ক্ষেত্রে।

টিভিতে স্পন্সরড সাংবাদিকতা এখন প্রতিদিনের ব্যাপার। সংবাদপত্রে বিশেষ বিশেষ দিনে এই স্পন্সরশিপ দেখা যায়।

টেলিভিশনে স্পন্সর করা সংবাদ ও শিরোনাম ‘কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না’ মর্মে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন ২০১১ সালে।

ধানমণ্ডি সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এম এ মতিন রিট আবেদনে বলেছিলেন, টিভি চ্যানেল কখনো বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির স্বার্থের বিপক্ষে যায় এমন সংবাদ প্রচার করে না।

এতে জনগণ তথ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রুলে তথ্য, স্বরাষ্ট্র ও আইনসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এবং প্রাইভেট টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন, বৈশাখী, চ্যানেল আই ও বাংলাভিশনের প্রধান নির্বাহীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এমবেডেড সাংবাদিকতা কখনো আদর্শ সাংবাদিকতা নয়। স্পন্সর করা সংবাদ বা শিরোনামও আদর্শ সাংবাদিকতা হতে পারে না।

যে প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট তৈরি করা হবে তাদের আর্থিক বা লজিস্টিক সাহায্য নিলে রিপোর্টে কোনোভাবেই বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না।

মিডিয়ার বাণিজ্যনির্ভর সাংবাদিকতা রিপোর্টার ও অন্য বিভাগের সাংবাদিক এবং ব্যবস্থাপনাকর্মীদের মিডিয়া এথিঙ্ না মানায় এক ধরনের উৎসাহ।

মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও শ্রদ্ধাবোধ অর্জন ও তা অব্যাহত রাখার দায়িত্ব মূলত সম্পাদকের।

সিরিয়ার খবরের প্রধান উৎস সোশ্যাল মিডিয়া

যুদ্ধ সাংবাদিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতার যে টার্মটি বেশি পরিচিত তা হচ্ছে ‘এমবেডেড জার্নালিজম’। বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে থাকেন সংবাদকর্মীরা।

নিজের ইচ্ছ‍ার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়, কেটে ফেলতে হয় ফুটেজের অংশ বা ছবি।

কিন্তু সিরিয়ায় সাংবাদিকদের এ সুযোগও মিলছে না। পশ্চিমা বা অন্য দেশের সাংবাদিকদের প্রবেশ এক প্রকারে নিষিদ্ধ সিরিয়ায়। যারা যুদ্ধের শুরুতে ঢুকতে পেরেছে তাদের দুই বা একজন রয়েছেন।

মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন- 

এছাড়াও সাংবাদিকদের জন্য ভয়ঙ্কর স্থানটির নামেও উঠে এসেছে সিরিয়া। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন করছে।

সামাজিক মাধ্যমগুলোর ওপর ভিত্তি করেই সিরিয়ার অধিকাংশ খবর জানাচ্ছেন সাংবাদিকরা।

এমনকি ২১ আগস্ট সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তারও উৎস ছিল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো।

ইউটিউবে বিশ্ব যেসব ফুটেজ দেখছে, সেগুলোও কভার করছেন পশ্চিমা সাংবাদিকরা।

তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কারণে পূর্ববর্তী উত্তেজনা বা সংকটের সময় আমেরিকার জনগণ যেভাবে তথ্য পেয়েছে তাতে পরিবর্তন আসবে।

তথ্য সুত্র অনলাইন মিডিয়া

মতামত দিন